আমাদের সমালোচনার রীতি কি তবে এইঃ আনিসুজ জামান

আমাদের সমালোচনার রীতি কি তবে এইঃ আনিসুজ জামান

Anisuz Zaman: Writer, Song Writer and Author
আনিসুজ জামান

সমালোচনা-সাহিত্য সাহিত্যেরই অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। তাই এটি নৈর্ব্যক্তিক ও বস্তুনিষ্ঠ হওয়া জরুরি। সমালোচনা-সাহিত্য পাঠকদের শিল্পসাহিত্যের অলিগলি ধরে অদৃশ্য সব বাঁক পার করে একেবারে অন্দরমহলে পৌঁছে দেয়। কিন্তু সমালোচনা যদি হয়ে ওঠে বিদ্বেষপ্রসূত বা স্তুতিমূলক অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তাহলে পাঠককে বিভ্রান্ত করে ভুল পথে চালিত করবে। তাই একজন সমালোচকের দায় একজন কবি কিংবা কথাসাহিত্যিকের চেয়ে কোনো অংশে কম না। বরঞ্চ একজন কবি পাঠকের প্রতি তাঁর দায় এড়াতে চাইলেও সমালোচক কোনোভাবে সেটা পারেন না। আমাদের দেশের সাহিত্য-সমালোচনা অধিকাংশ সময় নৈর্ব্যক্তিক ও বস্তুনিষ্ঠ হয় না। অনেকে যে আফসোস করে বলেন, আমাদের সমালোচনা-সাহিত্য যুক্তিহীন তোষামোদ এবং ভিত্তিহীন খারিজের মধ্যে আটকে আছে; তা একেবারে মিথ্যা বলেন না। সমালোচনার ভাষা রপ্ত করতে না পারলে যৌক্তিক সমালোচনাও ব্যক্তি-আক্রমণ অথবা ব্যক্তিতোষণে পরিণত হতে পারে। এমন অনেক নজির আপনারা ফেসবুকীয় সাহিত্য-সমালোচনায় পেয়ে যাবেন।

সাধারণভাবে আমরা ধরে নিতে পারি, একটি বই সমালোচনার জন্য একজন সমালোচক দুটো কারণে বেছে নিতে পারেন: এক. বইটা গুরুত্বপূর্ণ; অথবা, দুই. বইটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও বইয়ের লেখক তাঁর সামগ্রিক কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোনো অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ না, সেই বই সমালোচনার জন্য নির্বাচন করা হলে ভাবতে হবে সমালোচকের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। সমালোচনা মানে তো এমন না যে, যে-বইটির কোনো কিছুই আমার ভালো লাগে নি, সেই বইটি আগাগোড়া ধুয়ে-ছিলে লবণ মাখিয়ে দেওয়া! সমালোচনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মন্দলাগা, ভালোলাগা দুটো দিকই। তাই প্রশংসা (‘অ্যাপ্রিসিয়েশন’)-ও সমালোচনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই যে বইটি নিয়ে লেখা হচ্ছে সেই বইটি বেছে নেওয়ার কারণটা লেখার মধ্যে সুকৌশলে তুলে ধরতে হবে। নিশ্চয় বইটির কিছু না কিছু ভালো লেগেছে, সেগুলোও তুলে ধরতে হবে। বইটি যে সমস্ত প্রত্যাশা পূরণ করতে অসফল হয়েছে, সেগুলো গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করতে হবে। প্রবন্ধের ভাষা এমন হবে যেন যেকোনো মহলে সেটা উপস্থাপনযোগ্য হয়।

কলোম্বিয়ায় একটা কথা “আমি হলাম মায়ের সসেজ”, অনুবাদের সময় আমাদের পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হবে, যদি বলা হয়: “আমি হলাম মায়ের সর্বশেষ ভরসা”

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের সুপরিচিত একজন কবি, লেখক ও অনুবাদক আমার একটি অনূদিত বই সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি নামের উচ্চারণ ও বানান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্প্যানিশ উচ্চারণে ‘দোঞা’ না ‘দনয়াঁ’? সেইটা ধরে কোনো টেক্সট খারিজ করে দেওয়া চলে না। যেমন, বাংলাদেশ ও কলকাতার লেখক-অনুবাদকরা এখনো বোর্হেসের নামের উচ্চারণ নিয়ে একক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন নি। কলকাতায় ‘বোর্খেস’ লেখা হচ্ছে। আবার সেখানেই কেউ কেউ ‘বোর্হেস’ও লিখছেন। এটা গৌণ বিষয়। কেউ সচেতনভাবে প্রচলিত নামের বানানের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে জেনেবুঝেও এমনটি করে থাকতে পারেন। দস্তইয়েফ্‌স্কি শুদ্ধ জেনেও কেউ প্রচলিত অর্থে দস্তয়ভস্কি লিখে থাকতে পারেন। ভুলটা দুভাবে ভাগ করতে পারি। একটা হলো মুখ্য ভুল, যেটা মূলের পাঠই বদলে দেয়। মূল বিকৃত হয়। আরেক ধরনের ভুল হলো, নামের উচ্চারণগত ভুল। এটা গৌণ ভুল।

আমাদের সমালোচনার রীতি কি তবে এইঃ আনিসুজ জামান

অনূদিত বই শব্দ ধরে ধরে সমালোচনা করার রীতিও সব সময় সঠিক সিদ্ধান্তে আমাদের পৌঁছে দেয় না। আমি যদি “মে তিরান দে লোকা”র অনুবাদ করি “আমাকে ফেলে দেয় পাগলে”, তাহলে হবে না। আমাকে বলতে হবে “আমাকে পাগল ঠাউরেছে”। কলোম্বিয়ায় একটা কথা “আমি হলাম মায়ের সসেজ”, অনুবাদের সময় আমাদের পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হবে, যদি বলা হয়: “আমি হলাম মায়ের সর্বশেষ ভরসা”। ফ্রিজে যখন কোনো খাবার থাকে না, তখন সসেজ দিয়ে হাতের কাছে যা থাকে তাই খাওয়া যায়। এটাই শেষ ভরসা। তাই আক্ষরিক অনুবাদে এটা হবে না। এখানে এসে ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ করতে হবে। অনুবাদ সব সময় এক ধরনের ‘ইন্টারপ্রেটেশন’। অনূদিত বইয়ের সমালোচনা করার সময় এটি মাথায় রাখা উচিত।

তার মানে কি অনুবাদে ভুল হয় না? অবশ্যই অনুবাদে ভুল হয়। পরম শুদ্ধতা বলে শিল্পসাহিত্যে কিছু আছে বলে আমার জানা নেই। ভুল না করার একটাই উপায়, কাজ না করা। যেহেতু আমি অনুবাদ করি, তাই আমারও ভুল হয়ে থাকতে পারে। তবে ভুলটা কোন পর্যায়ের সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ভুলের একটা দৃষ্টান্ত দিতে আমি বোর্হেসের টেক্সটে যাচ্ছি। কী বলব, কেউ যদি এভাবে অনুবাদ করেন, “একজন মানুষ রাতের অন্ধকারে বাঁশের নৌকা নিয়ে পবিত্র কাদায় সেটা লুকিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু কেউ তাকে দেখেনি”? মূলে বোর্হেস যেটা বলতে চেয়েছেন, তা হলো: “তাকে পুঁতে ফেলতে কেউ দেখে নি।” অর্থাৎ এখানে দুটো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তাকে পুঁতে ফেলতে কেউ দেখে নি মানে সে পুঁতেছে কিন্তু কেউ দেখে নি; অথবা সে আসলে পুঁতে ফেলে নি। কিন্তু যখন অনুবাদে এভাবে ‘লুকিয়ে ফেলেছে কিন্তু দেখেনি’ বলা হচ্ছে, সেখানে একটা সম্ভাবনাকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। বোর্হেস সেটা চান নি। যেমন তাঁর ‘আস্তেরিয়নের বাড়ি’ গল্পের শেষে মিনোতাওরেস যেখানে মারা যান, সেখানে বাংলায় অনুবাদ করার সময় কেউ কেউ বাঁচিয়ে রেখেছেন। গ্রিক পুরাণে অ্যালোপোডোর খণ্ডে মিনোতা বা মিনোতাউরোর আখ্যানটা জানা না থাকার কারণে বা পাঠের সময় সেটি স্মরণে না আনার ফলে ভুলটি হয়েছে বলে অনুমান করি।

Anisuz Zaman With his two friends
স্প্যানিওল-জানা তিন বন্ধু: বাম পাশ থেকে রাজু আলাউদ্দিন, আনিসুজ জামান ও রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী

আরেকটা ভুল হলো প্রত্যক্ষ ভুল। যেমন: পেদ্রো পারামো অনুবাদে আমাদের একজন অগ্রজ অনুবাদক “ন্যাকড়া/ত্যানা দিয়ে ঘরমোছা”র অনুবাদ করেছেন “নিড়ানি দিয়ে ঘরমোছা”। এই ভুল নিয়ে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন হয় না। অনুবাদকের অসতর্কতার কারণে এমন ভুল হয়ে থাকে। অজ্ঞতার কারণেও হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন অজ্ঞতা থাকা অস্বাভাবিক না। অনুবাদের সময় দুটি সংস্কৃতির মধ্যে কোনো একটি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাশোনা কম থাকলে এ ধরনের ভুল হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

উল্লিখিত বিষয়গুলি অনূদিত বই নিয়ে সমালোচনা লেখার সময় উঠে আসতে পারে। অন্তত একটা একাডেমিক আলোচনায় এই দিকগুলো উঠে আসা সমীচীন বলে আমার ধারণা।

কোনো সমালোচনার নামকরণ থেকেই যদি প্রকাশ পায় সমালোচক ‘খুন’ করার মতলব নিয়ে বসেছেন, তাহলে সেটা হবে খুবই দুঃখজনক।

যে ভুলগুলির কথা উল্লেখ করলাম, এই ধরনের ভুল আমার অনুবাদেও হতে পারে। সমালোচক যখন এগুলো ধরিয়ে দেবেন, আমার তখন বুঝতে সুবিধা হবে। নিজে নিজে পৃথিবীর সবকিছু বুঝে ফেলা যায় না। এই কারণে সমালোচনা-সাহিত্যকে এলিয়টের মতো বড় মাপের কবি সৃজনশীল সাহিত্যের জন্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছেন। সমালোচককে আমি এই কারণে আমার ‘সৃষ্টিশীল’ প্রেরণা বলে মনে করি। সমালোচনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘ক্রিটিক’ করা, ভ্রান্তি ও অপূর্ণতা তুলে ধরা—সেই বিশ্বাস থেকেই বলছি।

কিন্তু সমালোচক যদি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। ভুল উদ্ঘাটনের মূল উদ্দেশ্য যদি হয় আমাকে তার কলমের ধার দিয়ে হত্যা করা, তাহলে সেই সমালোচনার যৌক্তিক অংশটুকুও গুরুত্ব হারায়। কোনো সমালোচনার নামকরণ থেকেই যদি প্রকাশ পায় সমালোচক ‘খুন’ করার মতলব নিয়ে বসেছেন, তাহলে সেটা হবে খুবই দুঃখজনক।

যেমন সম্প্রতি একজন প্রাজ্ঞস্বর লেখক তাঁর শত ব্যস্ততার মধ্যেও পরপর আমার দুটি অনূদিত বই নিয়ে আলোচনা করলেন। আমার খুশি না হওয়ার কারণ নেই। নিঃসন্দেহে এটা আমার বড় প্রাপ্তি হতে পারত; কিন্তু যখন টের পেলাম আমার অনূদিত বইয়ের একটি বাক্যও তিনি প্রশংসাযোগ্য মনে করেন নি, তারপরও তিনি শ্রম দিয়ে কাজটি করেছেন তখন বোঝা গেল তাঁর এই আলোচনার পেছনে ভিন্ন মতলব আছে। অনুবাদককে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করার কারণে তাঁর বই ধরে তাকে নিচে টেনে নামানোর মধ্যে কোনো সাহিত্যিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। তাঁর আলোচনা দুটো যারা পড়েন নি, তাঁদের উদ্দেশ্যে আলোচনা থেকে কয়েকটি বাক্য তুলে ধরছি। তার আগে বলি, একটা গদ্যের শিরোনাম: ‘পেদ্রো পারামো : আনিসুজ জামানের “অনুবাদ” কিংবা পুষ্পবনে মত্ত হাতি’, অন্যটির ‘বিমাতার গুণগানের বিমাতাসুলভ অনুবাদ’। শিরোনামের মধ্যেই প্রকাশ পায় আলোচকের পাঠ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আলোচনা পাঠ শুরু করলে সে বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যায়। একটি অংশে তিনি লিখেছেন: “আনিস তার স্বভাবসুলভ অজ্ঞতা দিয়ে পূরণ করেছেন এমন কিছু শূন্যতা যা সেখানে কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয়।” এখানে ‘স্বভাবসুলভ অজ্ঞতা’ শব্দের প্রয়োগই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করে দেয়। আবার তিনি লিখেছেন: “অনুবাদক আনিসুজ জামান উপন্যাসের এইসব কলাকৌশল সম্পর্কে নিরতিশয় অজ্ঞ বলে অনুবাদে এসব উপেক্ষা করে গেছেন অবলীলায়।” এখানে তিনি ‘নিরতিশয় অজ্ঞ’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে অনুবাদক সম্পর্কে তাঁর পূর্বগৃহীত সিদ্ধান্তও পাঠকদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরো লিখেছেন: “…সাহিত্য সম্পর্কে তার জ্ঞান যে অতিশয় নিম্নমানের তাতে কোনো সন্দেহ নেই। থাকলে এরকম একটি শিল্পরুচিসম্পন্ন উপন্যাসকে তিনি তর্জমার নামে ভাষিক অজ্ঞতা দিয়ে ধর্ষণ করতেন না।” এখানে যে বইটি নিয়ে আলোচনা করছেন সেই বইয়ের অনুবাদকের “সাহিত্যজ্ঞান অতিশয় নিম্নমানের” উল্লেখ করে তিনি আলোচনাকে ব্যক্তি-আক্রমণে রূপান্তর করেছেন। আরও আপত্তিকর হলো, তিনি বলছেন, “তিনি (অনুবাদক) তর্জমার নামে ভাষিক অজ্ঞতা দিয়ে ধর্ষণ করতেন না।” ‘ধর্ষণ’ শব্দটার ভার আমরা অনুধাবন করতে পারি। অনুবাদকের প্রতি তার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশ কতটা তীব্র সেটা বোঝার জন্য এই একটা বাক্যই যথেষ্ট।

ব্যক্তি-আক্রমণমূলক ও দুরভিসন্ধিমূলক সমালোচনা কোনো একাডেমিক ডিসকোর্স তৈরি করে না।

এভাবে আলোচনার প্রতিটি অংশে অনুবাদককে ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে মনোযোগী হয়েছেন সমালোচক। এখানেই শেষ নয়, ফেসবুকে তার শেয়ার-পোস্টে বিভিন্ন মন্তব্যের উত্তরে তিনি লিখেছেন: “বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে তার (অনুবাদকের) কোনো ধারণাই নেই।” কিংবা “অনুবাদক এর কিছুই জানেন না”। এ থেকেও পরিষ্কার হয়, আলোচ্য সমালোচক তাঁর ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার উদ্দেশ্য নিয়েই বইদুটির আলোচনা করেছেন, এই কারণে তিনি যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন সেখানেই তার সেই বিদ্বেষ প্রকাশ করছেন। তার অন্তর বিদ্বেষে ভরে ওঠার কারণে সেটা হয়তো তার অবচেতনেই প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে।

এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন হতে পারে, বইটি ভালো লাগে নি বলেই অনুবাদককে অশ্লীলভাবে আক্রমণ করা নাকি অনুবাদককে আক্রমণ করার পূর্বসিদ্ধান্ত থেকেই একই অনুবাদকের পরপর দুটি বই আলোচনার জন্য বেছে নেওয়া?

এই প্রশ্ন উঠত না, যদি সমালোচনার ভাষা ব্যক্তি-আক্রমণের দিকে ধাবিত না হতো। এখন প্রশ্ন হতে পারে, তিনি যে ভুলগুলো তুলে আনলেন সেগুলো কি ঠিক? আমি সে বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরতাম যদি আলোচনাটি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার জন্য রচিত না হতো। সাহিত্য-সমালোচনায় ইতি-নেতি বলে কিছু নেই। নেতিবাচক সমালোচনা সব সময় একাডেমিক সমালোচনার অপরিহার্য অংশ। কিন্তু ব্যক্তি-আক্রমণমূলক ও দুরভিসন্ধিমূলক সমালোচনা কোনো একাডেমিক ডিসকোর্স তৈরি করে না। লেখার উদ্দেশ্য যদি বিদ্বেষমূলক হয়, সেটি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন থাকলেও আগ্রহ তৈরি করে না। এই কারণে তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আলোচনা একটা চমৎকার একাডেমিক বাহাসের সম্ভাবনাকে শেষ করে দিয়েছে। আমার প্রতি “স্বভাবসুলভ অজ্ঞ”, “নিরতিশয় অজ্ঞ” এসব নন-একাডেমিক (পড়ুন আক্রমণাত্মক) ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি আমাকে সমস্ত আলোচনা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য আসলে কোনো ব্যক্তি-সমালোচনা না। বাংলাদেশের সমালোচনা-সাহিত্যের চল সম্পর্কে ধারণা দিতে প্রসঙ্গক্রমে কথাগুলো বলা। একজন সমালোচক সম্পূর্ণ স্বাধীন মানুষ। সাহিত্যের স্বার্থেই তাঁর স্বাধীনতার পৃষ্ঠপোষণ আমাদের করতে হবে। কিন্তু স্বাধীনতা মানে এই না, ব্যক্তিগত বিষোদ্গার উগরে দেওয়া। তাই, সমালোচনায় কী বলছি সেটার চাইতে কিভাবে বলছি সেটা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। কলুষিত আত্মা থেকে মুক্তি পাক আমাদের সমালোচনা-সাহিত্য, সমালোচনা হোক যৌক্তিক ভাষায়। সমালোচনা-সাহিত্য একটা ‘academic discipline’, একচ্ছত্র বন্ধুকৃত্য বা বিদ্বেষ প্রকাশ করার মাধ্যম না। আশা করি, এ সম্পর্কে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করতে পেরেছি।

সূত্র: পরস্পর

আরো পড়ুন: এই জগতের রাজত্ব : আলেহ কার্পেন্তিয়ের | অনুবাদঃ আনিসুজ জামান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *