আনহেলেস মাস্ত্রেত্তা’র জীবন আমার উপড়ে নাও (প্রথম পর্ব)
আনহেলেস মাস্ত্রেত্তা (জ. ১৯৫৯) সমকালিন বিশ্বসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কথাসাহিত্যিক। তাঁকে লাতিন আমেরিকার বুম-পরবর্তী সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি একইসঙ্গে সাংবাদিক, অভিনেত্রী ও প্রযোজক। নারীচরিত্রপ্রধান রাজনৈতিক উপন্যাস রচনার জন্য বিখ্যাত। তাঁর সাহিত্যে নারী চরিত্ররা ভীষণ সাহসী, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তারা আত্মপরিচয় নির্মাণে যথেষ্ট সচেতন।
আনহেলেস মাস্ত্রেত্তার সবচেয়ে সাড়া জাগানো উপন্যাসের নাম Arráncame la vida, যেটি Tear This Heart Out শিরোনামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে উপন্যাসটি অবলম্বনে সিনেমা নির্মিত হয়। মেক্সিকান রেভ্যুলেশনের সময় এবং পরবর্তী প্রেক্ষাপট নিয়ে রোম্যান্টির-রাজনৈতিক ধারার এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। সে বছর বইটি মেক্সিকোতে “বেস্ট বুক অব দ্য ইয়ার” পুরস্কার জেতে। এই উপন্যাসে মাস্ত্রেত্তা খোলাখুলিভাবে যৌনতার অনুষঙ্গ তুলে ধরেছেন। উপন্যাসটি প্রধান নারীচরিত্র কাতালিনার বয়ানে রচিত। মেক্সিকান জেনারেল মাক্সিমিলিয়ানো আবিলা কামাচোর জীবনীর ছায়া অবলম্বনে লেখা। দুর্নীতিবাজ, হিংস্র ও নারীভোগী রাজনীতিবিদ তিনি। তার অসম-বয়সী স্ত্রী হয়ে কাতালিনা দৃঢ়তার সঙ্গে ন্যারেটরের ভূমিকা পালন করেছেন। উপন্যাসটি পাঠ করে প্রকৃত মেক্সিকো, মেক্সিকোর রাজনীতি ও সমাজবাস্তবতা সম্পর্কে পাঠক ধারণা পাবেন।
উপন্যাসটি অনুবাদের স্বত্ত্ব নিয়ে স্প্যানিশ থেকে অনুবাদ করেছেন অনুবাদক আনিসুজ জামান। তিনি এরই মধ্যে গাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেসের পৃথিবীখ্যাত উপন্যাস নিঃসঙ্গতার একশ বছর এবং ওনেত্তির উপন্যাস কুয়া অনুবাদ করেছেন। সম্প্রতি তাঁর অনুবাদে আরো প্রকাশিত হয়েছে সমকালিন কলোম্বিয় ছোটোগল্পের সংকলন গাবোর দেশে গাবোর পরে।
জীবন আমার উপড়ে নাও প্রকাশিত হবে ঢাকার এক একটা প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার আগে পাঠক বিডিআর্টস-এ ধারাবাহিকভাবে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আজ প্রকাশিত হলো উপন্যাসটি প্রথম পর্ব।
মূল থেকে অনুবাদ: আনিসুজ জামান
-সবগুলো একেকটা গাধার বাচ্চা, তাই না?
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে চারপাশে তাকাই:
-কারা? আমি জিজ্ঞাসা করি।
আপনি হ্যাঁ বলেন, কারণ আপনি যে একমত তা চেহারাতেই দেখা যাচ্ছে। সে হাসতে হাসতে বলে।
ঠিক আছে কিন্তু কারা? আমি বললাম।
সে তার সবুজ চোখদুটির একটি বন্ধ করে বলে: পুয়েব্লার লোকেরা, সুন্দরী! আর কেই-বা হতে পারে?
আমার মতে পোবলানরা এমন করে হাঁটত আর জীবনযাপন করত যেন মনে হতো শহরটি শতাব্দী ধরে ওদের বাপের সম্পত্তি। আমরা না, যারা পনির বানাতে শিখে কৃষকের মেয়ে হয়েও দুধ দোয়ান ছেড়ে দিয়েছি। আন্দ্রেস অ্যাসেনসিও না, যে সমস্ত কাকতালীয় ঘটনা ও ধূর্ততার জন্য জেনারেল হয়ে ওঠে, হয়তবা শুধু মাত্র উপাধিটা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে যেটা রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করে।
আমাদের সাথে বাড়িতে যেতে চেয়েছিল এবং সেই দিন থেকে সে প্রায়শই দেখা করতে শুরু করল, আমার সাথে এবং পুরো পরিবারের সাথে। আমার বাবা-মা আমার মতোই আনন্দিত এবং বুদ হয়েছিল ওর আচরণে। আন্দ্রেস তাদের এমন গল্প বলত যেখানে সে সবসময় বিজয়ী হতো। এমন কোনো যুদ্ধ ছিল না যা সে জেতেনি, এমন কোনো হত্যা নেই যা সে বিপ্লব বা নেতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য বা আত্মরক্ষার জন্য করেনি।
অল্প সময়ের মধ্যে সে আমাদের একজন হয়ে ওঠে। এমনকি আমার বড় বোন তেরেসা যে তাকে বুড়ো ভাম বলতে শুরু করেছিল এবং বারবারা যে তাকে ভীষণ ভয় পেত—ওরাও প্রায় ততটাই মজা করত যতটা কনিষ্ঠ পিয়া করেছে। সে আমার ভাইদের গাড়িতে চড়িয়ে চিরকালের জন্য কিনে নিয়েছিল। মাঝে মাঝে আমার জন্য ফুল আর তাদের জন্য আমেরিকান চুইংগাম নিয়ে আসত। ফুলগুলো কখনোই আমাকে টানেনি, কিন্তু আমি সেগুলিকে গুছিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ মনে করতাম। যখন সে সিগারেট ধরিয়ে বাবার সাথে কৃষক, শ্রমিক বা বিপ্লবের প্রধান নেতাদের নিয়ে আলাপ করত এবং বলত যে প্রত্যেকেই ব্যাক্তিগতভাবে ওর কাছে ঋণী, তখন আমি তাদের কথা শুনতে বসতাম এবং জোরের সাথে মতামত দিতাম। তাতে করে বাবার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা এবং অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়ে যেত। সে যখন চলে যেত, আমি তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতাম এবং এক সেকেন্ডের জন্য চুমু খেতে দিতাম, যেন গোপনে কেউ একজন দেখছে। এরপর ভাইদের পিছনে পিছনে দৌড়ে চলে যেতাম।
তখন কানে অনেক গুজব আসত: আন্দ্রেস অ্যাসেনসিওর অনেক নারী আছে, একজন সাকাতলানে, আরেকজন চোলুলায়, একজন পাশের লা লুস পাড়ায় এবং অন্যরা মেক্সিকো সিটিতে। সে মেয়েদের পটিয়ে পরে প্রতারণা করে, আসলে সে অপরাধী, পাগল, পরে আমাদের অনুশোচনা করতে হবে।
আমরা অনুশোচনা করেছি, কিন্তু বছর কয়েক পরে। তখন বাবা আমার চোখের নিচের কালো দাগ নিয়ে রসিকতা করত আর আমি তাকে চুম্বন করতে শুরু করতাম।
বাবাকে চুমু দিতে ভালো লাগত, মনে হতো আমার বয়স আট, মোজায় একটি ছিদ্র, লাল জুতা এবং রবিবারে প্রতিটি বিনুনিতে একটি রিবনের ফুল। আজ রবিবার এবং আর যেহেতু গাধা দুধ বহন করছে না, ওর পিঠে উঠে আলফালফা ঘাষের মাঠ পর্যন্ত গিয়ে চিৎকার করে বলি: বাবা, তুমি আমাকে খুঁজে পাবে না!
যখন কাছাকাছি তার পায়ের শব্দ আর কণ্ঠ শুনি, বাবা বলত: এই মেয়েটি কোথায়? কোথায় আমার মেয়ে?
আমার সাথে ধাক্কা খাওয়ার ভান না করা পর্যন্ত, এই যে আমার মেয়ে, এবং নিজেকে আমার কাছাকাছি ফেলে, আমার পা জড়িয়ে ধরে এবং হাসে: এবার আর কেথাও যেতে পারবি না। এক বড়ো ব্যাঙ তোকে ধরে ফেলেছে, এখন সে চুমু চায়।
আর সত্যিই সে একটি ব্যাঙের হাতে ধরা পড়েছে। আমার বয়স ছিল পনের এবং চেয়েছিলাম আমার কিছু ঘটুক। তাই আন্দ্রেস আমাকে কয়েকদিনের জন্য তেকোলুতলায় যাওয়ার কথা বললে আমি রাজি হয়ে যাই। সমুদ্র সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। সে আমাকে বলেছিল যে, রাতে সমুদ্র কালো এবং দিনে স্বচ্ছ হয়ে যায়। দেখতে যেতে চেয়েছিলাম। শুধু এই বলে একটি চিরকুট রেখেছিলাম: “প্রিয় বাবা-মা, চিন্তা করো না, আমি সমুদ্র দেখতে যাচ্ছি।”
আসলে, আমার জীবনের সবচেয়ে ভীতিকর অভিজ্ঞতাটা হয়েছিল। আমি ঘোড়াকে ঘোটকির পিছনে আর ষাঁড়কে গাভীর পিছনে ধাওয়া করতে দেখেছি। কিন্তু একজন পুরুষের খাড়া ধোন একেবারেই অন্য এক ব্যাপার। আমি ওকে হাত ঢুকাতে না দিয়ে, শব্দ না করে পুতুলের মতো শক্ত হয়ে থেকে নিজেকে স্পর্শ করতে দিই, যতক্ষণ না আন্দ্রেস আমাকে বলে, এত ভয় পাওয়ার কি আছে?
কিছুই না। বলি।
তাহলে আমাকে এভাবে দেখছ কেন?
আসলে আমি নিশ্চিত নই যে তোমারটা আমার ওখানে আটবে কিনা!” আমি উত্তর দিই।
ধূর পাগলি! শরীর ঢিলা করে দাও।’ বলে সে আমাকে আলতো করে পাছায় থাপ্পর মারে। দেখছ তুমি কত জড়োসড়ো। এভাবে সম্ভব না। নিজেকে শিথিল করো। না চাইলে তোমাকে কেউ করবে না। আমাকে আবার আদর করতে শুরু করে, সময় নিয়ে। এবার আমার ভালো লাগে।
দেখলে তো আমি কামড়ে দিই না, সে বলে, আমার সাথে এমনভাবে কথা বলছে যেন আমি দেবী। -দেখো, এরই মধ্যে ভিজে গেছে, সে একই রকম স্বরে মন্তব্য করে যে স্বরে আমার মা তার রান্নার আনন্দ প্রকাশ করে। তারপরে সে ওটাকে ভিতরে ঢুকিয়ে নড়াতে শুরু করল, হাঁপাতে হাঁপাতে চেঁচিয়ে উঠল যেন আমি আবার শক্ত হয়ে না যাই… খুব শক্ত।
-তুমি ‘উপভোগ’ করতে পারছ না, কেন উপভোগ করো না? সে পরে জিজ্ঞাসা করে।
-কিছু একটা অনুভব করেছি, কিন্তু শেষটা বুঝতে পারিনি।
কিন্তু, ওটাই তো গুরুত্বপূর্ণ! সে ঈশ্বরের সাথে কথা বলার মতো করে বলে। হায় খোদা, এই বুড়িরা যে কবে শিখবে!
আর সে ঘুমিয়ে পড়ে।
আমি সারারাত জেগে ছিলাম, যেন তেতে আছি। আস্তে আস্তে নিজেকে স্পর্শ করছিলাম। একটা তরল কিছু আমার পা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। স্পর্শ করলাম। সেটা আমার ছিল না, সে আমার গায়ে ওটা ফেলেছিল। ভোরবেলায় আমি আমার সমস্ত মনোনিবেশ বিছানায় দিই। যখন সে বুঝতে পারে যে আমি বিছানায় শুয়েছি সে একটি হাত প্রসারিত করে আমার উপরে রাখে। একে অন্যের স্পর্শে আমাদের শরীর জেগে ওঠে।
– আমাকে শেখাও না কেন? আমি বলি।
-কি শেখাব?
-‘উপভোগ’ করতে।
এটা শেখানোর বিষয় না; তোমাকে বুঝে নিতে হবে। সে উত্তর দেয়।
তাই আমি শেখার জন্য নিজেকে সঁপে দিই। শুরুতে আমি নিজেকে সমর্পণের কথা ভাবি, একদম সম্পূর্ণ নিবেদন করে দেওয়ার। আমরা সৈকত ধরে হাঁটার সময় আন্দ্রেস কথা বলে যাচ্ছিল। আমি হাত দোলাচ্ছিলাম, মুখ খুলছিলাম যেন আমার চোয়াল খসে যাচ্ছে, ক্রমাগত পেটটা উপর নীচ করছিলাম আর নিতম্ব টাইট করে আবার ঢিল করছিলাম।
জেনারেল কি নিয়ে কথা বলছিল? আমি এখন আর ঠিক মনে করতে পারি না, তবে সে সব সময় তার রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কথা বলত, আর আমার কোনো প্রতিউত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে, আমার মতামতের কোন ধার না ধেরে এমন করে কথা বলছিল যেন সে দেয়ালের সাথে কথা বলছে। সে তখন পরিকল্পনা করছিল কিভাবে জেনারেল পাইয়ারেসের কাছ থেকে পুয়েবলা রাজ্যের শাসনক্ষমতা অর্জন করা যায়। পাইয়ারেসকে গাধার স্তর থেকে ভাল কিছু না ভাবলেও সে ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
“তুমি যেহেতু তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছ তার মানে সে এতোটা গাধা না।” তাকে এক বিকালে বলি। আমরা তখন সূর্যাস্ত দেখছিলাম।
-অবশ্যই সে গাধা। আর তুমি এসবে নাক গলাচ্ছ কেন? কে তোমার মতামত চেয়েছে?
-তুমি চার দিন ধরে একই কথা বলে যাচ্ছ, আমার এখন মতামত দেওয়া চলে।
-মেয়ের কথা শোনো! এখনো যে জানে না বাচ্চা কিভাবে জন্ম হয় আর এরই মধ্যেই জেনারেলদের নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছে। ব্যাপারটা ভালোই লাগছে। সে বলে।
সপ্তাহ শেষ হলে যেমন স্বাভাবিকভাবে নিয়ে গিয়েছিল তেমন করেই সে আমাকে আমাদের বাড়িতে রেখে প্রায় এক মাসের জন্য উধাও হয়ে যায়। আমার বাবা-মা আমাকে কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য ছাড়াই বাড়িতে ঢুকতে দেয়। তারা তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল না। তাদের ছয় সন্তান, তাই তারা সমুদ্র যে কত সুন্দর সেটা আমার সাথে উদযাপন করতে শুরু করল আর জেনারেল দয়াবশত আমাকে সেটা দেখাতে নিয়ে গেছে।
“দন আন্দ্রেস আসছেন না কেন?” দিন পনেরো জেনারেলের অনুপস্থিতির পর বাবা জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন।
“সে জেনারেল পাইয়ারেসকে হারানোর ফন্দি আঁটায় ব্যস্ত।” আমি বলি। আর কিই বা বলতে পারতাম। কারণ তার দেয়া ‘উপভোগের’ আবেশে আমি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম।
স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলাম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরে মেয়েরা স্কুলে যায় না বললেই চলে। তবে আমি আরও কয়েক বছর গিয়েছিলাম কারণ সালেসিয়ানা নানরা আমাকে তাদের গোপন স্কুলে বৃত্তি দিয়েছিল। তাদের পড়াতে নিষেধ করা হয়েছিল, তাই আমার কোনো ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি ছিল না, তবে সময়টা ভাল কেটেছে। যা পেয়েছি তার জন্য আমি ঋণী। আমি ইজরাইলের বিভিন্ন উপজাতি, গোত্রপ্রধান এবং বংশধরদের নাম আর প্রতিটা শহর ও পবিত্র ইতিহাস অতিক্রমকারী পুরুষ ও নারীদের নাম জেনেছি। শিখেছি যে বেনিতো হুয়ারেস একজন ফ্রিম্যাসন ছিলেন এবং অন্য পৃথিবী থেকে ফিরে এসেছিলেন একজন পুরোহিতের কান ধরে টানতে যাতে তিনি আর মাস্-এ হুয়ারেসকে বিরক্ত না করেন। অনেক দিন ধরেই তিনি নরকে আছেন।
মোদ্দাকথা, আমি চলার মতো হাতের লেখা, ব্যাকরণের কিছু জ্ঞান, পাটিগণিতের সামান্য, ইতিহাসের কিছুই না এবং বেশ কয়েকটি সেলাইয়ে ফোড় শিখে স্কুল শেষ করেছি।
আমাকে যখন সারাদিন বাড়িতে বসে থাকতে হতো, মা আমাকে আদর্শ গৃহিণী বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল, কিন্তু আমি সবসময় মোজা সেলাই করতে এবং শিমের বীচি থেকে ময়লা বাছতে অনাগ্রহ দেখাতাম। ভাবনা-চিন্তার অনেক সময় থাকত আমার, তাই হতাশ হতে শুরু করি।
এক বিকেলে এক জিপসি মহিলার সঙ্গে দেখা করতে যাই। সে লা লুস পাড়ায় থাকত, প্রেম-বিশেষজ্ঞ হিসাবে তার ছিল খ্যাতি। দীর্ঘ লাইন ধরে লোকজন অপেক্ষা করছিল দেখা করার জন্য। আমার পালা এলে সে আমাকে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে কী জানতে এসেছি। খুব গম্ভীরভাবে বলি: “আমি উপভোগ করতে চাই।” সে আমার দিকে তাকায়, আমিও তার দিকে তাকাই, তার শরীর মোটা, থলথলে, সাদা স্তনের অর্ধেকটা ব্লাউজের উপর দিয়ে উতলে উঠেছে, উভয় বাহুতে রঙিন ব্রেসলেট পরেছে এবং কানে স্বর্ণের গোলাকার দুল পরেছে যা গালকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল।
“এটা তো এখানে কেউ শিখতে আসে না,” তিনি আমাকে বললেন। আবার না তোমার মা এ নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া বাঁধায়!
-মানে তুমিও উপভোগ করো না? জিজ্ঞাসা করি।
জবাবে সে তার কাপড় খুলতে শুরু করে। এক সেকেন্ডের মধ্যে তার স্কার্ট ও ব্লাউজ খুলে নগ্ন হয়ে সামনে দাঁড়ায়। প্যান্টি বা ব্রা কিছুই পরা ছিল না।
“আমাদের এইখানে এই ছোটো জিনিসটা আছে।” সে তার দুই পায়ের মাঝে হাত রেখে বলল। ‘এটা দিয়ে তুমি উপভোগ করবে। আমরা এটাকে ‘ঘন্টা’ বলে ডাকি, তবে অবশ্যই আরো নাম আছে। যখন তুমি কারও সাথে শুতে যাবে, তখন মনে করবে এই জায়গাটি তোমার শরীরের কেন্দ্রস্থল, মনে করো সমস্ত ভাল জিনিস এখান থেকে আসে—ধরে নাও এটা দিয়েই তুমি চিন্তা করছ, শুনছ এবং দেখছ। ভুলে যাও তোমার মাথা ও হাত আছে, তোমার সমস্ত সত্তা ওখানে রাখো, তোমার সব কিছু। এরপর দেখবে তুমি উপভোগ করছ কি না।’
তারপর সে মুহূর্তেই তার কাপড়চোপড় পরে নিয়ে আমাকে দরজায় ঠেলে দেয়।
‘এবার ভাগো। তোমার কাছ থেকে কিছু নিচ্ছি না, কারণ আমি কেবল মিথ্যা বলার জন্য ফিস নিই, তোমাকে যা বলেছি সব সত্য, কসম খেয়ে বলছি।’ বলে সে দুটি আঙুল দিয়ে ক্রশ তৈরি করে চুম্বন করে।
বাড়ি ফিরে আসি, এখন আমি এমন একটি গোপন কথা জানি যা কাউকে বলা সম্ভব না। সমস্ত আলো নিভে যাওয়া পর্যন্ত এবং তেরেসা ও বারবারা ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সেই ‘ঘণ্টা’য় হাত রেখে আঙুল বোলাতে শুরু করি। গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুই সেখানে ছিল, সেটা দিয়ে আমি দেখছি, শুনছি, ভাবছি। আমার মাথা ও হাত ছিল না, পা ছিল না, এমনকি নাভিও না। পা দুটো আমার শক্ত হয়ে গেল যেন খসে পড়তে যাচ্ছে। হ্যাঁ, সেখানেই সব কিছু ছিল।
ঘটনা কি কাতি? কি নিয়ে ওতো তর্জনগর্জন করছিস?” তেরেসা আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করে। পরের দিন সকালে, সে উঠে সবাইকে বলে যে আমি অদ্ভুত শব্দ করে তাকে জাগিয়ে দিয়েছি, যেন আমি ডুবে যাচ্ছিলাম। মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন, এমনকি আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চায় কারণ এভাবেই কামেলিয়াস উপন্যাসের মেয়েদের যক্ষ্মা শুরু হয়।
মাঝে মধ্যে এখনও আমি গির্জায় বিয়ের ব্যাপারে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। মনে হয় যদি একটি দীর্ঘ লালগালিচাসহ গির্জায় বিয়ে করতাম, এবং আমার বাবা আমাকে বেদীর কাছে নিয়ে যেত যখন অর্গানে বিবাহোৎসবের বাদ্য বাজছে আর সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে।
বিয়ের কথায় আমার সবসময় হাসি পাই। জানি যে এই সব অযথা আয়োজন একঘেয়েমিতে শেষ হয়ে যাবে একজন পেটমোটা লোকের সঙ্গে রোজ বিছানায় যাওয়া এবং জেগে ওঠার মধ্য দিয়ে। তবে সংগীত ও করিডোরে হাঁটা… সেই মুহূর্তটি নববধূর, এবং বিষয়টি এখনও আমার মধ্যে বিনোদনের চেয়ে ঈর্ষার অনুভূতি জাগায়।
আমার বিয়েটা এমনভাবে হয়নি। আমি চেয়েছিলাম আমার বোনেরা গোলাপি রঙের কাপড় পরে কণেসঙ্গী হবে, অরগান্ডি এবং জরির অযথা আবেগে ভাসতে থাকবে—বাবা কালো এবং মা লম্বা পোশাকে। নিজের জন্য আমি ফোলা ফুল হাতা কলারতোলা পোশাক বেছে নিতাম যেটি আমার পেছনে সবগুলো সিঁড়ি বেয়ে বেদী পর্যন্ত লম্বা লেজের মত ছড়িয়ে থাকত।
এসব আমার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারত না, তবে আমি অনন্য মুহূর্ত হিসেবে সঞ্চয় করতে পারতাম স্মৃতির ভাণ্ডারে, যেভাবে অন্যান্য বিবাহিত মেয়েরা করে। মনে করতে পারতাম আমার করিডোর ধরে হাঁটা, আন্দ্রেসের হাত ধরে রাখা, এবং আমার সদ্য অর্জিত আভিজাত্যের উচ্চতা থেকে মাথা নাড়ানো, যে মর্যাদা সবাই নতুন বধূকে বেদি থেকে ফিরে আসার সময় দেয়।
যদি নিজের ইচ্ছেই চলতে পারতাম তাহলে ক্যাথেড্রালেই বিয়ে করতাম, কারণ সেখানে দীর্ঘতম করিডোর আছে। কিন্তু আমি বিয়ে করি নি। আন্দ্রেস আমাকে বোঝায় যে সেটা খুব বাজে হবে। সে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারবে না। সে হিমেনেসের ক্রিস্টেরো-বিরোধী যুদ্ধে গির্জার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল; বস মাক্সিমোর প্রতি তার আনুগত্য আবশ্যিক, আর কোনভাবেই সে গির্জায় বিয়ে করবে না। তবে একটি রেজিস্ট্রি করে, হ্যাঁ, নাগরিক আইনকে সম্মান করতে হবে। যদিও সর্বোত্তম হলো একটি সামরিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করা।
এটা আসলে বলার জন্য বলা। কারণ সত্যি বলতে আমরা যে কোনো সাধারণ সৈনিকের মতই বিয়ে করেছি।
একদিন খুব ভোরে সে আসে।
“তোমার মা-বাবা আছেন?” সে জানতে চায়।
তারা বাড়িতেই ছিলেন। দিনটি ছিল রবিবার। প্রতি রবিবারের মতোই বাড়ি ছাড়া কোথায়-বা থাকবেন!
“তাদের বলো আমি তোমাদের সবাইকে নিতে এসেছি, আমরা বিয়ে করব।”
“কারা?” জিজ্ঞাসা করি।
(চলবে)