আদলফো বিয়োয় কাসারেসঃ ‘মোরেলের উদ্ভাবন’

আদলফো বিয়োয় কাসারেসঃ ‘মোরেলের উদ্ভাবন’
-আনিসুজ জামান

আদলফো বিয়োয় কাসারেস আর্জেন্টিনার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক। তার পছন্দের জনরা ছিল ডিটেকটিভ ফিকশন ও ফ্যান্টাসি। ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয় কাসারেসের সর্বাধিক পঠিত উপন্যাস ‘মোরেলের উদ্ভাবন’। বইটির মুখবন্ধ লেখেন তার বন্ধুবর লেখক হোর্হে লুই বোর্হেস। বোর্হেসের বোন নোরা বোর্হেস এর প্রচ্ছদ আঁকেন। স্প্যানিশ সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির খামতির কথা উল্লেখ করে বোর্হেস বলেন, আদলফো বিয়োয় কাসারেসের মাধ্যমে স্প্যানিশ ভাষার সাহিত্যে এই নতুন জনরার সাহিত্য লেখা শুরু হলো। উপন্যাসটি প্রকাশের পরপরই আলোড়ন তোলে পাঠক মহলে।

উপন্যাসের প্রটাগনিস্ট একজন পলাতক আসামী। সে ন্যায়বিচার এড়াতে একটি দ্বীপে আত্মগোপন করে—সে অদ্ভুত রহস্যময় এক দ্বীপ। এখানে সবকিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটে। দ্বীপে পর্যটকরা আসে, এবং ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আড়াল থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ করে উপন্যাসের নায়ক। হঠাৎ করে পর্যটকরা অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রথমে সে ভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত কারণে বিভ্রম হচ্ছে। কিন্তু রাতেই আবার পর্যটকদের দেখতে পায়। তারা এমন করে কথা বলে যেন তারা অনেকদিন ধরে সেখানে আছে। একটা সময় সে বুঝতে পারে, সে যা দেখছে, যে মানুষগুলো তার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার কিছুই বাস্তব না। তাহলে কি?

এই প্রশ্নের জবাব আমি দিচ্ছি না—স্পয়লার দিয়ে দিলে পাঠক পাঠের আনন্দটা হারিয়ে ফেলবেন। শুধু এটুকু বলতে পারি, গল্পটির মধ্যে বাস্তববাদ, কল্পনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি এবং গথিক সাহিত্যের উপাদান আছে—বোর্হেস যেটাকে ‘যুক্তিসঙ্গত কল্পনা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। ওক্তাবিও পাসও উপন্যাসটির প্রশংসা করে বলেন, উপন্যাসটিকে আদর্শ উপন্যাস বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না।

হুলিও কোর্তাসার, হুয়ান কার্লোস ওনেত্তি, আলেহো কার্পেন্তিয়ের, গাবরিয়েল গারসিয়া মার্কেসের মতো লাতিন সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখকরা এই উপন্যাসের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পাঠক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই উপন্যাসটি লাতিন সাহিত্যের ঐতিহ্যের মধ্যে থেকেও স্বতন্ত্র, একেবারে আলাদা এক ধরনের সাহিত্যের সূচনা করেছে।

আমি এটাকে টিপিক্যাল সায়েন্স ফিকশন বা জাদুবাস্তববাদ বলতে চাই না। এমন এক জনরার উপন্যাস যেটি প্রচলিত সাহিত্যের রীতির মধ্যে বোঝানো সম্ভব না। বাংলা ভাষার পাঠক যখন পড়বেন, তাঁদেরও অভিন্ন অনুভূতি হবে বলে আমার বিশ্বাস। পাবেন পাঠক সমাবেশে।

সংগ্রহ করুন ‘মোরেলের উদ্ভাবন’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *